Tuesday, February 14, 2012

গুগলের প্রয়োজনীয়তা

অফিস বলেন আর ব্যবসা বলেন, প্রযুক্তির সুবিধা ছাড়া এখন শুধু পিছিয়েই পড়তে হবে।তথ্য খোঁজার বিশ্বসেরা ওয়েবসাইট (সার্চ ইঞ্জিন) গুগলের জিমেইল, জিটক, গুগল প্লাস ইত্যাদি সেবার সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। যোগাযোগের জন্য এসব তো আছেই, পাশাপাশি গুগলের আরও কিছু সেবা আছে, যেগুলো দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যবসায়িক কাজের অনেকটাই সমাধান করা যায়।অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে নিত্যদিনের জরুরি কাজগুলো হয়ে ওঠে আরও বেশিসাবলীল।
গুগলের নানা ধরনের সেবা বিনা মূল্যে ব্যবহারের সুযোগ আছে অনেক দিন থেকেই। ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিনা মূল্যের ই-মেইল সেবা জিমেইল, লেখালেখির জন্য গুগল ডকস, গুগল ক্যালেন্ডার, গুগল প্রোফাইল, গুগল প্লাস ইত্যাদি সহজেই ব্যবহার করা যায়।
সুবিধা পেতে যা যা লাগবে: গুগলের এ সুবিধা পেতে নিজের প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট নিবন্ধিত ডোমেইন বা ওয়েব ঠিকানা লাগবে। ডোমেইনের অধীনে গুগলের সেবাগুলো ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে গুগলের এসব সেবা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামে এবং বিনা মূল্যেই এগুলো ব্যবহার করা যাবে। তবে আরও বেশিসুবিধার জন্য খরচাপাতি করতে হবে।
জিমেইলের সব সুবিধা: সাধারণত নিজস্ব ডোমেইনে ই-মেইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজস্ব সার্ভার ব্যবহার করে থাকেন অনেকেই। তবে এসব ক্ষেত্রে সহজ উপায় রয়েছে গুগলের। গুগলের জিমেইল ইনবক্সটি ব্যবহার করা যায়। এতে বর্তমানে গুগলের পক্ষ থেকে ১০টি ই-মেইল ঠিকানা খোলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ঠিকানাটা হবে yourname@yourcompanyname.com, কিন্তু ব্যবহার করা যাবে জিমেইল ইনবক্স। পাওয়া যাবে গুগল ডক, গুগল ক্যালেন্ডার, চ্যাট করা, গুগলের জি-টক মেসেঞ্জার ব্যবহারের সুবিধা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি রয়েছে জিমেইলে টাস্ক ব্যবহারের সুবিধা। যেকোনো ই-মেইলকে সরাসরি টাস্ক হিসেবেও চিহ্নিত করে রাখা সম্ভব। এতে করে কাজের তালিকাটি সময়মতো পেয়ে যাবেন আপনি।রয়েছে গুগল অ্যাপস মার্কেটপ্লেস থেকে বিনা মূল্যে অসংখ্য প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুযোগ। বর্তমানে জিমেইলের মতোই বিনা মূল্যে সাত গিগাবাইট জায়গা পাওয়া যাবে এ ই-মেইল সুবিধায়। যদি এর বেশি জায়গা এবং ই-মেইল ঠিকানার প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে কেনা যাবে সেবাটি। জিমেইলের অন্যান্য সুবিধার মতো ফরোয়ার্ডিং, ল্যাবস, অ্যাকাউন্টস সেটিংসসহ সবকিছুই রয়েছে। ই-মেইল না খুলে শুধু চ্যাটের জন্য গুগল টক ব্যবহার করা যাবে। নানা সুবিধার মধ্যে বড় একটি সুবিধা হচ্ছে এর লগ-ইন ব্যবস্থা। www.gmail.com ঠিকানায় গিয়ে পুরো ঠিকানা (yourname@yourcompanyname.com) লিখে পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রবেশ করা যাবে ই-মেইলে। রয়েছে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য গ্রুপসুবিধা। এতে আন্তযোগাযোগ করা যাবে খুব সহজে।
গুগল ডকস: সাধারণত অফিস-সংক্রান্ত কাজের ক্ষেত্রে ওয়ার্ড ফাইলের ব্যবহার হয় খুব বেশি। ওয়ার্ডে কাজ করার জন্য গুগল ডকসের রয়েছে নানা সুবিধা, বিশেষ করে ব্যবসায়িক কিংবা অফিসের কাজে এর ব্যবহার দারুণ। কোনো বিষয় লিখে খুব সহজে ই-মেইলের মাধ্যমে সেটি আদান-প্রদান করা যায় সবার সঙ্গে।আবার একসঙ্গে অনেকে বিভিন্ন জায়গায় বসে গুগল ডকসে করতে পারেন।নিজেদের চিন্তাভাবনার বিনিময়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান একসঙ্গে করতে পারেন ডকস দিয়ে। যার যা প্রয়োজন, তিনি কোনো পরিবর্তন ছাড়া সেটা দেখতে পারবেন।প্রয়োজনে প্রিন্টও নেওয়া যাবে।
গুগলের এ সেবা নিয়মিত ব্যবহার করছেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল হাসান।তিনি জানান, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের, বিশেষ করে ব্যবস্থাপকদের জন্য অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডকুমেন্ট গুগল ডকসে রেখে দিই, যাতে করে প্রয়োজন সেগুলো ব্যবহার করা যায়।
এ কার্যক্রমটি সম্পূর্ণভাবে অ্যাডমিন নিয়ন্ত্রণকরতে পারেন।প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি ইচ্ছা করলে এই জায়াগায় কারও প্রবেশাধিকার (অ্যাকসেস) দিতে পারবেন। আবার ইচ্ছা করলে বাদ দিয়েও দিতে পারবেন।’
গুগল ডকসে নিয়মিতভাবে কাজ করা অ্যাকটিভ স্টিচ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আশরাফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে ব্যবসার কাজে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।এসব ক্ষেত্রে সভা ডেকে সবাইকে নিয়ে বসলে অনেক সময় নষ্ট হয়। তাই একই সময়ে গুগল ডকসে বসে সবাই মিলে নিয়ে ফেলি সিদ্ধান্তগুলো।’ তবে শুধু ডকুমেন্ট লেখালেখির কাজই নয়, রয়েছে উপস্থাপনা তৈরি (প্রেজেন্টেশন), হিসাবনিকাশ করা (স্প্রেডশিট), ফরম, ড্রয়িং ইত্যাদি সুবিধাও।
গুগল ক্যালেন্ডার: অনলাইনে জনপ্রিয় আরেকটি সেবা হচ্ছে গুগল ক্যালেন্ডার। অনলাইনে থাকায় খুব সহজে বিভিন্ন ইভেন্টের তালিকা করার পাশাপাশি সভা বা অন্যান্য কাজের হিসাব রাখা যায় সহজে। ফলে এর সঙ্গে যুক্ত সবাই ওই ইভেন্টস কিংবা সভার বিষয়টি জানতে পারবেন। গুগল ডকসের মতো গুগল ক্যালেন্ডারটিও সরাসরি একটি নির্দিষ্ট ঠিকানায় দেখা যাবে। নিজস্ব শেয়ারিং সুবিধা থাকায় এর তথ্যগুলো কারা কারা দেখবে, কারা পরিবর্তন করতে পারবে, বিস্তারিত সবাই দেখবে কি না, এসব তথ্যও পরিবর্তন করে প্রয়োজন অনুসারে ঠিক করা যাবে। এ ছাড়া নতুন ইভেন্টসের ক্ষেত্রে আলাদা ক্যালেন্ডার তৈরির পাশাপাশি দিন, সপ্তাহ, মাস অনুযায়ী সাজানো যাবে তথ্য। যখনই প্রয়োজন করা যাবে প্রিন্ট এবং করা যাবে শেয়ার। নিয়মিতভাবে গুগলের এসব সেবা ব্যবহার করেন অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান। বললেন, ‘গুগলের নানা সেবার মধ্যে গুগল ক্যালেন্ডার বেশ কাজের। বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের জন্য আলাদা করে গ্রুপ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে করে সহজে কাজের বর্তমান অবস্থাটা বোঝা যায়।’
ইউটিউব: গুগলের বড় একটি সেবা ভিডিও দেখার ওয়েবসাইট ইউটিউব। ইউটিউবে প্রতিষ্ঠানের নামে আলাদা চ্যানেল খুলেও ভিডিও রাখা যায়।
গুগল প্লাস: গুগলের সামাজিক যোগাযোগের সাইট গুগল প্লাসে যোগ দেওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত হচ্ছে একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট থাকা। নিজস্ব ডোমেইনে জিমেইলের ইনবক্স ব্যবহার করলে এতে খোলা যাবে গুগল প্লাসের অ্যাকাউন্টও। এতে ব্যবসায়িক ডোমেইনের আওতায় নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্কিংয়ের পাশাপাশি করা যাবে অন্যান্য কাজও।
গুগল কনট্যাক্ট: প্রাতিষ্ঠানিক কাজে ই-মেইল ঠিকানা সংরক্ষণের জন্য দারুণ একটি সেবা গুগল কনট্যাক্ট। এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ই-মেইল ঠিকানাগুলো বিভিন্ন গ্রুপ অনুযায়ী করা, নতুন গ্রুপ তৈরি ইত্যাদি করা যাবে। সংরক্ষিত ঠিকানাগুলো একটি নির্দিষ্ট ওয়েবলিংকেও দেখা যাবে। এ সুবিধাগুলোও পাওয়া যাবে নিজস্ব ডোমেইনের আওতায় থাকা গুগল কনট্যাক্টে।
মোবাইল অ্যাপস: গুগলের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডের জন্য রয়েছে নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন।এ অ্যাপসটি নিজস্ব ডোমেইনের মধ্যেও পাওয়া যাবে।
গুগল সাইট: গুগলের সাইট-সুবিধা ব্যবহার করেও নানা ধরনের কাজ করা সম্ভব। একটি পূর্ণাঙ্গ সাইট তৈরি করে এটি দিয়েই সভা বা দলের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম ইত্যাদি করা যাবে। বিনা মূল্যে টেম্পলেট দিয়ে সাইটটি তৈরি করে এতে যুক্ত করা যাবে ইভেন্টসের খবর, সাধারণ তথ্য, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব খবর, বিভাগীয় খবর ইত্যাদি।
রয়েছে সীমাবদ্ধতাও: ‘গুগলের এসব সেবা ব্যবহারের মাধ্যমে যেমন খরচ বাঁচবে, তেমনি সময়ও বাঁচবে প্রতিষ্ঠানের। আর কাজ হয়ে যাবে সহজে। তবে বড় কোনো ধরনের ব্যবসা কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এ সেবাগুলো তেমন উপযোগী নয়।’ জানালেন বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী জাহিদুল হাসান।
তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গুগলের এ সেবাগুলো শুরুতে যথেষ্টই সহায়তা করবে।




সূত্রঃ প্রথম আলো- ফেব্রু-২০১২

No comments:

Post a Comment